জসিম উদ্দীন ::
পর্যটননগরী কক্সবাজারকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে সরকার কক্সবাজারের ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা চালু করে।
২০১৯ সালে চালু হওয়া ফ্রি ‘ওয়াই-ফাই’ এ সংযোগ থাকলেও থাকে না ডাটা। যার ফলে সরকারের এ ওয়াই-ফাই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। এ অবস্থায় সরকারের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
অনেকে আবার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাকে এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করেছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা ‘আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানি লিঃ’ এর পক্ষ থেকে ‘ক্ষেত্র বিশেষে ডাটা না থাকার’ বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। আর প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান ‘কউক’ বলেছে এখনো প্রকল্পটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
তবে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
জানা যায়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সৌন্দর্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ ঘটাতে সরকার ২০১৯ সালে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে ‘ফ্রি ওয়াইফাই’ সেবা চালু করেন।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে ওয়াইফাই সংযোগের পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা’। পর্যটকদের পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন প্রায় ৭ হাজার ব্যবহারকারী। এ লক্ষ্যে সৈকত এলাকা ছাড়াও শহরের ৩৫টি স্থানে ৭৪টি বিশ এমবিপিএস হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ সম্পন্ন রাউটার স্থাপন করা হয়েছে।
যেখানে প্রত্যেকটি রাউটারে ১০০ জন করে একসাথে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবে। আর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন ‘আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানিজ লিমিটেড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
শুরু থেকে এ প্রকল্পের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ থাকলে ওয়াইফাই ডাটা সংযোগ না পেয়ে হতাশ হয়েছেন তারা।
কক্সবাজারে আগত পর্যটক ও স্থানীয়রা বলছে, কক্সবাজারে চালু হওয়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে ফ্রি ওয়াইফাই’ মোবাইফোনে কানেকশন আসলেও ডাটা থাকে না। যারফলে সরকারি এ ওয়াইফাই দিয়ে অনলাইন ভিত্তিক কোন কাজ করা সম্ভব হয়না। এটিকে অনেকে ডিজিটাল প্রতারণা বলেও দাবি করেছেন। অথচ প্রতিমাসে এমবিপিএস হিসেবে ৬০ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করছেন প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকা এবং উদাসিনতাকে এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন ব্যবহারকারীরা।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক আনোয়ার হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, কক্সবাজারে ফ্রি ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে শোনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি ডাটা আসে না। এটি বিভ্রতকর।
মাসুদ হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, গেল কয়েকদিন ধরে সৈকতের লাবনি পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্টে নিরিবিলিতে বসে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চেয়েছি কিন্তু সংযোগ পেলেও ডাটা পায়নি। এটি অভিনব প্রতারণা বলে মনে করছি।
কক্সবাজার সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বিপ্লব মুন্না বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঝাউতলা আর হলিডে মোড় এলাকায় আড্ডা দিই। কখনো ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে এ ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারিনি। অনেক মোবাইলে ডাটা আসলেও স্পীড খুবই বাজে। মূলত সরকারি টাকা লুটপাটের মহা উৎসবে মেতে উঠেছে আমরা নেটওয়ার্ক নামে এ প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে ‘আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানি লিঃ কক্সবাজারের সহকারি প্রজেক্ট ম্যানেজার হাসানুজ্জামান একুশে পত্রিকাকে বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে অনেক সময় আমরা টেকনিক্যাল কিছু সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ডাউন হলে এ সমস্যা একটু বাড়ে। বর্তমানে কক্সবাজারে ৬৫টি ডিভাইস সচল রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নেটওয়ার্কের সাথে বিসিসি’র এক বছরের চুক্তি শেষ হয়েছে। কাগজে কলমে প্রজেক্টের দায়িত্ব কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু এখনো তারা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেননি বলে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রকল্পের দেখভাল করা কর্মকর্তা ওয়াসিফ কবির প্রকল্প হস্তান্তরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিসিসি’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নেটওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এমবিপিএস হিসেবে প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেন সংস্থাটি। আমরা লোকাল অথরিটি হিসেবে দেখভাল করবো। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। যার কারণে অনেক কিছুই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।
তবে, ওয়াইফাই সংযোগে ডাটা সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানি লিঃ’কে বলা হয়েছে।
আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড এর এজিএম মাহমুদুন নবী চৌধুরী বলেন, আমরা আসলে বিষয়টি জেনেছি। এটি মূলত মোবাইল সেটের উপর নির্ভর করে, হচ্ছে। তারপরও কোনো অভিযোগ পেলে তা দ্রুত সময়ে সমাধান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর কর্মকর্তা ও প্রজেক্ট ম্যানেজার মধুসুদন চন্দ্র বলেন, তিন কোটি টাকা চুক্তিতে কক্সবাজার এবং সিলেটে ২০০ রাউডার নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানি লিঃ এর মেয়াদ শেষ হলে স্থানীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরই মধ্যে যদি কোথাও নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেয়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালে তারা সমাধান করবেন। তবে সকলের সহযোগিতায় প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করবে বলে মনে করেন তিনি
পাঠকের মতামত